বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন
মজিবর রহমান নাহিদ: ২০১৭ সালের ২৭ জুন হঠ্যাৎ এক সহকর্মীর ফোনে জানতে পারলাম শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক নেতা, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক, ইত্তেফাক বরিশাল অফিস প্রধান লিটন বাশার ভাই ইন্তেকাল করেছেন। খবরটি শোনার পরে যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। সাথে সাথে অনেক সিনিয়রদের ফোন দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। সাথে সাথে ছুটে গেলাম শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে শুনতে পেলাম লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাইয়ের গোড়া চাঁদ দাস রোডস্থ বাসায়। সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। প্রিয় ভাইয়ের লাশটি বাসার সামনে রাখা হয়েছে। একে একে সব গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলেন বাসায়। সহকর্মী ছাড়াও প্রশাসনের উর্দ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। ক্রমশই যেন সেখানে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে সহকর্মী ও স্বজনদের কান্নায়। বিশেষ করে সহকর্মী বেলায়েত বাবলু ভাইয়ের কান্না যেন কোন ভাবেই কেউ থামাতে পারছেনা, কে বা থামাবে সবার চোখ থেকেই যে পানি পরতেছে।
লিটন ভাইয়ের ছোট্ট শিশু সন্তান শব্দ এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তার বাবা আর বেঁচে নেই। কিছু সময় পরে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে আমিও পাশের একটি ভবনের নিচে নিয়ে গেলাম ভাইয়ের মরদেহটি। সেখানে তাকে গোসল করানো হয়েছে। গোসল শেষে লিটন ভাইকে শেষ বারের মতো নেয় হয় তার প্রিয় প্রেসক্লাবে। প্রেসক্লাবের নিচের রুমে তাকে শ্রদ্ধা জানায় বরিশালের সকলস্থরের সাংবাদিক সমাজ। সেখানেও সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেই দৃশ্য আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে। পরে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তার নিজ গ্রামের বাড়ি চরমোনাইতে চলে গেছিলাম সেই লাশবাহী ট্রাকে। তখনও সব সহকর্মীদের চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পরতেছিলো। চরমোনাই দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয় এই মানুষটিতে দাফন করা হয়।
লিটন বাশার ছিলেন বরিশালের সাংবাদিক অঙ্গণের মহানায়ক। তার কাছ থেকে শিখেছিলাম ছোটদের কিভাবে উৎসাহ করতে হয়, তার কাছ থেকে শিখেছিলাম কিভাবে সাহসের সাথে পথ চলতে হয়।
২০১৭ সালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের নির্বাচনে ভাইয়ের সাথে সাথে থাকার সুযোগ হয়েছিলো। সেবার মাত্র ১ ভোটে পরাজিত হলেও তার প্যানেলের ১৭ জনের বিজয়ের মহানায়ক কিন্তু সে ছিলেন। প্রেসক্লাব নির্বাচনের পরে আমাদের বরিশাল তরুণ সাংবাদিক ফোরামের নির্বাচন হয়েছিলো, নির্বাচনে আমি সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলাম। সেই নির্বাচনে ভাই শুরু থেকেই অনেক সাহস দিয়েছিলেন। ভাই সব সময় বলতো ন্যায় এবং নীতি নিয়ে চললে সব সময় এগিয়ে যেতে পারবে। নির্বাচনে আল্লাহর রহমতে আমি ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী মারুফ হোসেন সহ আমাদের পুরো প্যানেল জয়ী হয়েছিলো। নির্বাচন শেষে ভাইয়ের কাছে ফুল নিয়ে গেলে ভাই অনেক খুশি হয়েছিলেন। পরে আমাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে লিটন ভাইকে প্রধান অতিথি করেছিলাম। সেখানে তার উপদেশ ও পরামর্শ গুলো আজও আমার পেশায় কাজে লাগছে।
শ্রদ্ধেয় লিটন ভাই সব সময় আমাকে একটি কথা বলতেন ‘ব্যাটা সাহসের সাথে সব কাজ করবি, দেখবি এগিয়ে যাবি ইনশআল্লাহ’। ভাইকে দেখিলাম সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কিভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভাইয়ের সাথে বেশি কোন স্মৃতি না থাকলেও তার সাথে অল্প কিছু দিনে স্মৃতিগুলো বার বার মনে করিয়ে দেয়। আজ প্রিয় এই মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধাভরে এই মানুষটিকে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক এই কামনা করছি।
লেখকঃ সভাপতি, বরিশাল তরুণ সাংবাদিক ফোরাম ও বরিশাল প্রতিনিধি আনন্দ টেলিভিশন।